বউ, শালিকা এবং শালি ধানের চিড়ে
-------------------------------------------
ড. মোহাম্মদ আমীন
শালিকা বেড়াতে এলে হাসির সংখ্যা কমিয়ে দিই।
ড. মোহাম্মদ আমীন |
আগে গড়ে সাতাশ বার হাসলেও শালিকা এলে ষোল বারের বেশি হাসি না। হাসি এলেও জোর করে আটকে দিই। কারণ আছে। শালিকার বয়স ষোল বছর। আমার মনে হয়, হাসি বাড়ালে ষোড়শী শালিকার বয়সও বেড়ে যাবে। আমি শালিকার বয়স বাড়াতে চাই না।
যদিও কবি বলেন,
শালিকা
নব্বই বছর বয়স হলেও ফুটফুটে বালিকা।
আসলে শালিকার চেয়ে আদুরে শালিক হয় না। আমি জানি, যার নাই শালি, তার বুক খালি। বাগানের জন্য মালী, জীবনের জন্য শালি।এসব কথা বউয়ের সামনে বলা যায় না। শুনলে মুখ ছ্যাদা করে দেবে।তাই ভিতরে ভিতরে হেসে কুটি কুটি হয়ে উপরে উপরে গম্ভীর থাকার চেষ্টা করি।
তবু বউ বলে : সোয়ামি, তুমি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি হাসছ।
আমি প্রতিবাদ করি না, প্রশ্ন করি : কোথায়? লিজা না থাকলে তো আরো বেশি হাসি।
বউ বলে : এখানেই তো সন্দেহ। নিজেকে লুকাতে গিয়েই অধিকাংশ চোর ধরা পড়ে। স্বাভাবিক থাকলে হয়তো ধরাই পড়ত না। মীমের বাবা, তুমি ধরা পড়ে গেছ। ঠিক কথা, লিজা এলে তোমার হাসির সংখ্যা কমে যায়, কিন্তু হাসির আলো এত ফকফকা হয়ে উঠে কেন?
বউয়ের সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না। সব প্রশ্নের উত্তর দিলেও ফুল-মার্ক পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না। অন্তত বউয়ের পরীক্ষায়। কিছু না বলে রুমে এসে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করি।
বউ এসে ধমক মারে : মীমের বাবা।
: বলো।
: চোখ বন্ধ করে কী ভাবছ?
: কিছু ভাবছি না, ঘুমানোর চেষ্টা করছি।
: না, তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করছ না। মনে মনে চোখের কোণায় লিজাকে ভাবছ।
: কীভাবে বুঝলে?
: রবীন্দ্রনাথও অমন করতেন। তিনি নিজেই লিখে গিয়েছেন। লেখকরা একটু লুচ্ছা টাইপের হয়।
: তাহলে বই পড়ি?
: বই বউয়ের সতিন। বইয়ের পাতায় চোখ রেখে লেখাগুলি শালিময় করে দেবে।
: তাহলে লিজার সঙ্গে গল্প করি?
: না। তুমি বরং বাজারে গিয়ে শালির জন্য কিছু শালি ধানের চিড়ে নিয়ে এস। দেখ, আবার শালির কথা ভাবতে ভাবতে গাড়ির নিচে পড় না যেন।
: আমি মরলেই তো তোমার শান্তি।
: তুমি আমার ডিম পাড়া হাঁস সোনার। মরবে কেন গো?
--------------------------
--------------------------
————————————————-